বৃহস্পতিবার মুতাওয়াল্লি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া একটি সাংবাদিক বৈঠক
মুতাওয়াল্লি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া কর্তৃক
ওয়াকফ আইন ২০২৫ প্রত্যাহার/বাতিল:
ওয়াকফ বিলের মধ্যে রয়েছে (i) প্রক্রিয়াগত অনিয়ম
(ii) সাংবিধানিক লঙ্ঘন
(iii) অযৌক্তিকতা (ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি)
(iv) যুক্তিহীন এবং পূর্বধারণাপ্রসূত দৃষ্টিভঙ্গি।
ওয়াকফ হল এমন একটি সম্পত্তির স্থায়ী উৎসর্গ, যা একজন ব্যক্তি ইসলামি আইন অনুযায়ী ধর্মীয়, পুণ্য বা দানস্বরূপ উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাকেন। এই উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
(i) মসজিদ, কবরস্থান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ,
(ii) শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা,
(iii) দরিদ্র ও প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
ভারতে ওয়াকফ সৃষ্টি হতে পারে:
(i) মৌখিক বা লিখিত দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি ঘোষণার মাধ্যমে,
(ii) দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় বা দাতব্য উদ্দেশ্যে জমি ব্যবহারের মাধ্যমে,
(iii) উত্তরাধিকার শেষ হলে দান করে।
ওয়াকফ সৃষ্টিকারীকে বলে “ওয়াকিফ”, এবং যিনি এটি পরিচালনা করেন তিনি হলেন “মুতাওয়াল্লি”।
ওয়াকফ বাই ইউজার – নতুন ওয়াকফ আইন ২০২৫-এ অপসারণ:
যদি কোনও স্পষ্ট উৎসর্গ না থেকেও কোনও সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বারা ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যবহৃত হয়, তবে তা “ইউজার”-এর মাধ্যমে ওয়াকফে পরিণত হয়। এতে কোনও দলিল বা ঘোষণার প্রয়োজন পড়ে না।
১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে “বাই ইউজার” পদ্ধতি স্বীকৃত ছিল এবং মুসলিম ফিকাহবিদ ও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট উভয়ই এটি বৈধতা প্রদান করেছে। হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় দানসম্পত্তির ক্ষেত্রেও এই ধারা ব্যবহৃত হয়।
ওয়াকফ আইন ২০২৫ ৩ এপ্রিল লোকসভা ও ৪ এপ্রিল রাজ্যসভায় পাস হয়েছে। এটি ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন বাতিল করে এবং ১৯৯৫ সালের আইন সংশোধন করতে চায়। এই আইন নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে:
• সংখ্যালঘুদের অধিকার খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা,
• সরকার দ্বারা অধিক নিয়ন্ত্রণ,
• ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্য,
• মুসলিম সমাজের আপত্তিগুলো যৌথ সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হলেও উপেক্ষিত হয়েছে।
কেন মুসলিম ও অমুসলিম উভয়েই ওয়াকফ আইন ২০২৫-এর বিরোধিতা করছে?
এটি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যক্তিগত লোক, ল্যান্ড মাফিয়া ও সরকারের দ্বারা দখলের পথ খুলে দিচ্ছে।
এটি ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ করছে। ওয়াকফ প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন দুর্বল করে দিচ্ছে, যেগুলো মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই আইনের মাধ্যমে সংবিধানিক দায়বদ্ধতা এবং ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের মূল ভাবনার বিরোধিতা করা হয়েছে।
আমাদের সংবিধানে বিভিন্ন ধর্মের জন্য পৃথক দানসম্পত্তি আইন রয়েছে:
• কাশী বিশ্বনাথ মন্দির আইন, ১৯৮৩ (উত্তরপ্রদেশ):
“কোনও ব্যক্তি যদি হিন্দু না হন, তবে তিনি বোর্ডের সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য বা সিইও হতে পারবেন না।”
• তামিলনাড়ু ধর্মীয় ও দাতব্য দান আইন:
এই আইনে নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্য বা কমিশনার হিন্দু হতে হবে।
সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদ
ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার অন্তর্ভুক্ত:
(i) ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ,
(ii) ধর্মীয় বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত,
(iii) স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অধিকার,
(iv) ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তি আইন অনুযায়ী পরিচালনা।
তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে আলাদা আচরণ কেন?
(i) কেন সরকার চায় মুসলিম ওয়াকফগুলি অমুসলিম দ্বারা পরিচালিত হোক?
(এটি মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য এবং সংবিধানের ১৫, ২৫, ২৬ ও ২৯ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে।)
(ii) কেন সরকার মুসলিমদের সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার কেড়ে নিতে চায়?
(iii) কেন সরকার বোর্ডে কেবল চারজন মুসলিম সদস্য রাখার কথা বলছে (যেখানে বর্তমানে ১১ জনই মুসলিম)?
(iv) কেন সরকার মুসলিমদের মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়?
সেন্ট্রাল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে এবং সিইও নিয়োগে মুসলিমদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যা তাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির অংশ।
বড় সংখ্যায় ওয়াকফ সম্পত্তি সরকার দখল করে রেখেছে (বিস্তারিত বিচারপতি সাচার কমিটির রিপোর্টে)।
ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত; এটি কোনও আইন দ্বারা অধিগ্রহণযোগ্য নয়।
নতুন আইনে জেলা প্রশাসক ও রাজ্য সরকারকে একতরফাভাবে ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি সম্পত্তি ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—যা সম্পূর্ণভাবে সংবিধান পরিপন্থী। ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিমদের মালিকানাধীন ও পরিচালিত হওয়া উচিত।
শুধুমাত্র মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
ওয়াকফ সম্পদ ব্যবস্থাপনা মুসলিমদের হাতে থাকা উচিত, সরকারের নয়।মুতাওয়াল্লি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া-র দাবি:
২০২৫ সালের নতুন ওয়াকফ আইন বাতিল হোক, শুধুমাত্র কিছু সংশোধন করা যেতে পারে ওয়াকফের কল্যাণে। মুতাওয়াল্লি নিয়োগ বা অপসারণ শুধু ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হওয়া উচিত, ওয়াকফ বোর্ডের নয়। বোর্ডের আধা-বিচারিক ক্ষমতা বাতিল করা হোক।
ধর্মীয় ও দাতব্য কাজের জন্য ব্যবহৃত ওয়াকফ সম্পত্তির উপর কর ছাড় দেওয়া হোক। ওয়াকফ আয়কে আয়কর আইনের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হোক। সব মুতাওয়াল্লির ভোটাধিকার থাকা উচিত, ভোটের জন্য এক লক্ষ টাকার যোগ্যতা সীমা তুলে দেওয়া হোক। থিকা আইনের আওতা থেকে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি ছাড় দেওয়ার জন্য সরকার অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তি জারি করুক। ওয়াকফ বোর্ড প্রতিবছর সংবাদপত্রে প্রকাশ করুক, কী কী ধর্মীয় ও দাতব্য কাজ করেছে। আইনের আওতায় মুতাওয়াল্লি নিজেই উন্নয়ন করতে পারবেন, ওয়াকফ বোর্ডের অনুমতি লাগবে না।
দখল মামলাগুলি মুতাওয়াল্লি নিজে ট্রাইব্যুনালে দায়ের করতে পারবেন, বোর্ড নয়। দারগাহ, ইমামবাড়া, মসজিদ ইত্যাদির কমিটি মুতাওয়াল্লি ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হওয়া উচিত, বোর্ডের নয়।
➢ কোনও দলিল না থাকলে, আদালতই ওয়াকফ বাই ইউজার ঘোষণা করুক। ওয়াকফ সম্পত্তিতে সীমাবদ্ধতার আইন প্রযোজ্য নয়। উন্মোচিত: ভারতে ওয়াকফ সম্পত্তির পরিমাণ ৬ লক্ষ ৯০ হাজার একর।
এর প্রায় অর্ধেক অংশ অবৈধভাবে দখল করে আছে ব্যক্তি ও সরকার।
ওয়াকফ বোর্ড ও মুতাওয়াল্লিরা দেশের অন্য ধর্মীয় দান সংস্থাগুলোর তুলনায় সবচেয়ে দরিদ্র।
এর কারণ:
1. ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি বা লিজ দেওয়া যায় না।
2. ভাড়াটিয়ারা নামমাত্র ভাড়া দেয়।
3. ব্যাংক কোনও ঋণ দিতে পারে না কারণ ওয়াকফ সম্পত্তির বিরুদ্ধে বন্ধক রাখা যায় না। এই অবস্থা কার দায়িত্বে?
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পুরোপুরি দায়ী।
সরকার ওয়াকফ থেকে কর আদায় করে কিন্তু কোনও উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করে না।
ওয়াকফ বোর্ড হল সরকার মনোনীত সদস্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা।
প্রতিটি ওয়াকফ এস্টেটের আয়ের ৭% বোর্ড নেয়। এই অবস্থার দায় সরকারকেই নিতে হবে। সুতরাং, কেন্দ্র সরকার কর্তৃক ওয়াকফ আইনে আনা সংশোধনগুলি অসাংবিধানিক, জনস্বার্থ পরিপন্থী এবং গণতান্ত্রিক ভারতের আদর্শের পরিপন্থী।
সাঈদ ইরফান শের-এর ডেস্ক থেকে চেয়ারম্যান ও আহ্বায়ক — মুতাওয়াল্লি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া
Comments